কোন খাবার কতটুকু খাবেন?
২০ আগস্ট ২০১৫, ১৮:২৪
খাদ্যের মুখ্য উপাদানশ্বেতসার বা শর্করা (উৎস-চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, আলু, মূল জাতীয় খাদ্য)আমিষ (উৎস-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি)স্নেহ জাতীয় খাদ্য (উৎস্য-তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি)খাদ্যের গৌন উপাদানখাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (উৎস-রঙ্গিন শাক-সবজি, ফল, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি)।খনিজ উপাদান (উৎস-ছোট চিংড়ি, ছোট মাছের কাঁটা, ঢেঁড়স, কচুশাক ইত্যাদি)।নিরাপদ পানিকোন খাদ্য উপাদান দৈনিক কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন?শ্বেতসার বা শর্করা : মোট প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।আমিষ : শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম (পূর্ণ বয়স্কদের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ২-৩ গ্রাম (৪ বছরের শিশুর জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৭ গ্রাম (৪-১৮ বছরের বয়সের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৫ গ্রাম (গর্ভবতী ও প্রসূতির জন্য)।স্নেহ জাতীয় খাবার : প্রায় ৩৫-৪০ গ্রাম (পূর্ণ বয়স্কদের জন্য)। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য দৈনিক ২-৩ গ্রাম (১ বছর পর্যন্ত শিশুর)ভিটামিন (তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয়):- ভিটামিন-এ: প্রায় ৫০০০ আইইউ (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। প্রায় ৬০০০ আইইউ (গর্ভবর্তী মায়ের জন্য )। প্রায় ২০০০-৪৫০০ আইইউ (১-১২ বছর বয়স পর্যন্ত)।- ভিটামিন-ডি : ২.৫ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য)। ১০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতী, প্রসূতি ও শিশুর জন্য)।- ভিটামিন-ই : প্রায় ৫-১০ মিলিগ্রামভিটামিন (পানিতে দ্রবণীয়) :-ভিটামিন-সি : ২০ মিলিগ্রাম (শিশুর জন্য)। ৩০ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। ৫০ মিলিগ্রাম (গর্ভবতী ও প্রসূতীর জন্য)-ভিটামিন-বি২ : ১.৪ মিলিগ্রাম (পুরুষদের জন্য)। ১.০ মিলিগ্রাম (মহিলার জন্য)। ১.১ মিলিগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)।- নায়সিন : ১৮.২ মিলিগ্রাম(পুরুষদের জন্য)। ১৩.২ মিলিগ্রাম (মহিলার জন্য)। ১৫.১ মিলিগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)।- ভিটামিন-বি১২ : ১.০ মাইক্রোগ্রাম (শিশুর জন্য)। ২.০ মাইক্রোগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)। ৩.০ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতীর জন্য)।- খনিজ উপাদান: ক্যালসিয়াম : ৪৫০ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)।ফসফরাস : ৮০০ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)পটাশিয়াম : ২.৫ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)আয়রন : ৯ মিলিগ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)আয়োডিন : ১৫০ মাইক্রোগ্রাম প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যপানি : প্রায় ২-২.৫ লিটার প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যসুষম খাদ্য : সারা বিশ্বের এখন স্লিম ফিগারের জয়জয়কার। মেদবিহীন ছিপছিপে আকর্ষণীয় দেহের গড়ন সবার প্রিয়। এই প্রত্যাশা পূরণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে স্বাভাবিক ওজন আর সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়া সহজেই সম্ভব।যে খাদ্যের মধ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান পরিমাণমতো বর্তমান থাকে, তাকেই এক কথায় সুষম খাদ্য বলা হয়। অর্থাৎ মানবদেহের প্রয়োজনীয় ও পরিমাণমতো ছয়টি উপাদানযুক্ত খাবারকেই সুষম খাদ্য হিসেবে ধরা হয়। সুষম খাদ্য দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের জোগান দেয়। এ সুষম খাদ্যের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বুদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদনসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়ে থাকে।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিচে একজন পূর্ণবয়স্ক স্বাভাবিক পরিশ্রমী ব্যক্তির স্থানীয় স্বল্পমূল্যের খাদ্য থেকে সুষম খাদ্যের তালিকা দেওয়া হলো।খাদ্যশস্য (চাল, আটা, ময়দা সুজি) : ২৮৫ গ্রাম/ (২৬০ গ্রাম)মসুর, মুগ, ছোলা, মটর, খেসারি : ১০০ গ্রাম / ৪০ গ্রামমিষ্টি কুমড়া, আলু : ২০০ গ্রাম / ১২০ গ্রামকচু, বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক-সবজি : ১০০ গ্রামকাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম : ২০০ গ্রামঅঙ্কুরিত বীজ : ৪০ গ্রামভোজ্য তেল : ৫০ গ্রামচিনি/গুড় : ২০ গ্রামমৌসুমি ফল : ২৫০ গ্রামমাংস : ৫০ গ্রামদুধ : ২৫০ গ্রামটাটকা শাক : ১২০ গ্রামডিম : ২০ গ্রামওজন কমানোর ক্ষেত্রে দৈনিক কতটুকু ক্যালরি পোড়ানো উচিত?ওজন কমাতে হলে একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ও মহিলার ৫০০ ক্যালরি কম খেতে হবে। যেমন : একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ যদি ২২০০ ক্যালরি খান (দৈনিক ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী) সেক্ষেত্রে ২২০০-৫০০ = ১৭০০ ক্যালরি খেতে হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মহিলা যদি ১৭০০ ক্যালরি খান (দৈনিক ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী) সেক্ষেত্রে ১৭০০-৫০০ = ১২০০ ক্যালরি খেতে হবে। এই ৫০০ ক্যালরি কম খাওয়া হবে ব্যায়ামের ক্যালরি ও খাবারের ক্যালরি মিলিয়ে। এর কম খেলে মেটাবলিসম কমে যেতে পারে, শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ৫০০ গুণ ৭ = ৩৫০০ ক্যালরি কম খেলে ওজন কমবে সপ্তাহে এক পাউন্ড বা আধা কেজি। এই ৫০০ ক্যালরি কম খাওয়া হতে পারে প্রতিদিন ২৫০ ক্যালরি ব্যায়ামে বার্ন করা + প্রতিদিন ২৫০ ক্যালোরি কম খাওয়া। যেমন : একজন ব্যক্তি, যিনি প্রতিদিন ২২০০ ক্যালরি খান, তিনি যদি ব্যায়ামে ২৫০ ক্যালরি পোড়ান, তাহলে তিনি ওজন কমাতে ২৫০ ক্যালরি কম খাবেন। এটাই ওজন কমানোর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পথ। অনেকেই কম খাবার খান, তারা মনে করেন সে কম খাবার খেলে ওজন তাড়াতাড়ি কমবে।এটা ভুল ধারণা বরং প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরি কম খেলেই ওজন ঠিক মতো কমবে। একমাত্র অনেক বেশি ওজন যাদের তারা ওজন অনেক দ্রুত বা সপ্তাহে এক পাউন্ডের চেয়ে বেশি কমাতে (ডাক্তার/পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতে) পারে। খাবার খাওয়া খুব না কমিয়ে বরং আপনার দৈনন্দিন কাজ কর্ম বা ব্যায়ামের পরিমাণ একটু বাড়াতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার যে ওজন কমবে,তা পরবর্তীকালে ধরে রাখতে পারবেন।লেখক : চিফ ফিটনেস ট্রেইনার, পারসোনা হেলথ